কালো যাদু
কালো যাদু
কালো যাদু হলো জ্বিন-শয়তানের সাথে যাদুকরের কুফরি চুক্তির ফলাফল।
এ চুক্তিতে যাদুকর শয়তানের সন্তুষ্টির জন্য:
শিরক করে
আল্লাহ ও রাসূল ﷺ কে গালিগালাজ করে
অপবিত্র ও ঘৃণিত কাজ সম্পাদন করে
এর বিনিময়ে শয়তান যাদুকরের আদেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষতি করে।
> “যে ব্যক্তি , তাবিজ বা মন্ত্রে ভরসা করে, সে শিরক করল।” — সহীহ মুসলিম: ২২৩০
কালো যাদু-র পেছনের গোপন কার্যক্রম:
১. যাদুকর শয়তানের ইবাদত করে (শিরক করে)।
২. শয়তান খুশি হয়ে যাদুকরের অনুগত হয়।
৩. দুর্বল জ্বিনদের দিয়ে নিরীহ মানুষকে ক্ষতি করে।
৪. শক্তিশালী জ্বিনরা দুর্বলদের ভয় দেখিয়ে কাজ করায়।
৫. মন্ত্র, তাবিজ বা গিটে বেঁধে ক্ষতি বাস্তবায়ন করে। যাদুর কার্যকারিতা শয়তান খুশি হওয়া উপর নির্ভর করে।
আল্লাহকে গালি দিলে শয়তান খুশি হয়
কুরআন অবমাননা, অপবিত্রতা, গালি—এসব শয়তানী কাজ
শয়তান খুশি হলে যাদু কার্যকর হয়
কালো যাদুর প্রকারভেদ:
ক্ষতির ধরন অনুযায়ী কালো যাদু:
১. শারীরিক ব্যথা/অসুস্থতা/মৃত্যু
২. বিয়ে বন্ধ বা বিলম্বের যাদু
৩. স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের যাদু
৪. যৌনক্ষমতা নষ্ট, সহবাসে প্রতিবন্ধকতা
৫. মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক
৬. বশিকরণ, হঠাৎ কারো প্রতি আসক্তি
৭. পাগল বানানোর যাদু
৮. জিন শরীরে বেঁধে রাখার যাদু
৯. পরিবার বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের যাদু
১০. শরীর শুকিয়ে যাওয়ার যাদু
১১. অতিরিক্ত রাগ বা নিয়ন্ত্রণ হারানো
১২. সৌন্দর্য নষ্ট করে দেওয়া
১৩. ভয় বা আতঙ্ক তৈরি করা
১৪. অদৃশ্য আওয়াজ শোনার যাদু
১৫. দুর্বলতা সৃষ্টি যাদু
১৬. কাউকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার যাদু
১৭. বন্ধ্যাত্ব, কনসিভে বাধা, বাচ্চা নষ্ট
১৮. কাউকে কথা বলা থেকে বিরত রাখা
১৯. ঘুম নষ্ট বা অনিদ্রা
২০. শরীরে আগুন লাগার মতো জ্বালা
২১. বিছানায় ব্যথা/ঘুমে সমস্যা
২২. প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত
২৩. রোগ সৃষ্টির যাদু
২৪. নেশা ও যিনা প্রবণতা বাড়ানো
২৫. স্মৃতি দুর্বল করা, কথা ভুলে যাওয়া
২৬. রিজিক ও ইনকামে ও উন্নতিতে বাধার যাদু
২৭. ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ সৃষ্টি
অবস্থান ও প্রয়োগ পদ্ধতি অনুযায়ী কালো যাদু:
১. কবরে/মাটিতে/ঘরের কোণে পুতে রাখা যাদু
২. ছড়ানো বা স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমিত যাদু
৩. চোখের মাধ্যমে প্রভাবিত যাদু
৪. দুর্গন্ধ/ঘ্রাণ ব্যবহার করা যাদু
৫. মন্ত্র পাঠ করে করা যাদু
৬. তাবিজ, নকশা বা দাগের যাদু
৭. তালা মেরে নদীতে ফেলা যাদু
৮. পুতুলে সুই বা পিন ঢুকিয়ে করা যাদু
৯. গাছে বা উঁচু স্থানে লটকানো যাদু
১০. হাড় বা প্রাণীর অংশ ব্যবহার করা যাদু
১০- ব্যাক্তিগত তথ্য ও ব্যবহৃত জিনিস, দেহের অংশ ছবি দিয়ে করা যাদু
১১.গাছে পিন মেরে করা যাদু,
১২. মাছের পেটে নকশা দিয়ে সেলাই করা এবং কবুতরের মুখে সেলাই করা যাদু।
মেয়াদ ও জটিলতা অনুযায়ী কালো যাদুর ধরণ:
১. গিটের যাদু / বাণ বন্ধন
২. সম্মিলিত (একাধিক মানুষকে একসাথে ক্ষতি)
৩. গোত্রভিত্তিক ক্ষতির যাদু
৪. জিনকে শরীরে আটকে রাখা যাদু
৫. বাধার ছিটানো যাদু
৬. শয়তানের সাথে যাদুকরের চুক্তির যাদু
৭. ব্যাপক ক্ষতির (একাধিক লক্ষ্যে) যাদু
৮. নিকৃষ্ট, নাপাক বস্তুর যাদু
৯. জিনকে বাধ্য করে কাজ করানোর যাদু
১০. ছিদ্রযুক্ত যাদু—জিন চলাচলের পথ
১১. পেটে থাকা পুরনো যাদু
১২. নবায়নযোগ্য/চলমান যাদু
১৩. ত্বাতীল বা বাধা সৃষ্টি করা যাদু
১৪. প্রতিশোধপরায়ণ যাদু
১৫. স্থানান্তরযোগ্য যাদু (এক দেহ থেকে অন্যে)
১৬. নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ লক্ষ্য করে যাদু — যেমন:
মাথা, পেট, পা, পিঠ, বুক, জরায়ু, লজ্জাস্থান ইত্যাদি
১৭. বদ নজর বা হিংসা দ্বারা সৃষ্ট যাদু
১৮. পার্শপ্রতিক্রিয়ামূলক যাদু (বশ করার চেষ্টা করে, কিন্তু বিচ্ছেদ হয়)
নির্দিষ্ট শয়তানভিত্তিক যাদুর ধরন:
১. আশেক জিন দ্বারা করা যাদু
২. খাদেম শয়তানের যাদু
৩. ইবলিস পূজারী শয়তানের যাদু
৪. শিংওয়ালা শয়তানের যাদু
৫. ডানাওয়ালা শয়তানের যাদু
৬. সাপ-আকৃতির শয়তানের যাদু
৭. ইয়াহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু জিন দ্বারা করা যাদুএসব কালো যাদুতে আক্রান্ত হলে একজন শরঈ রাক্বীর পরামর্শ অনুযায়ী রুকইয়াহ করুন।
🌙 কালো যাদু (সিহর) সম্পর্কে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ও হাদিস
✅ ভূমিকা
কালো যাদু বা সিহর ইসলাম ধর্মে একটি বাস্তব বিষয়। এটি শয়তানি কাজ এবং মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে স্পষ্টভাবে যাদুর উল্লেখ করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন হাদিসে এর প্রভাব ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করেছেন। মুসলমানের দায়িত্ব হলো কালো যাদুর ভয় না পেয়ে বরং আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা এবং কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মেনে চলা।
🕌 কালো যাদুর প্রমাণ কুরআনে
আল্লাহ তা’আলা সূরা আল-বাকারাহ (২:১০২) এ যাদুর কথা উল্লেখ করেছেন:
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـٰكِنَّ ٱلشَّيَـٰطِينَ كَفَرُوا۟ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحْرَ
অর্থ: “সুলাইমান (আ.) কুফরি করেননি, বরং শয়তানরা কুফরি করেছে। তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।”
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, যাদু বাস্তব এবং শয়তানদের একটি কার্যক্রম।
📖 হাদিসে কালো যাদু সম্পর্কে আলোচনা
✨ হাদিস ১: রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর যাদু হয়েছিল
ইমাম বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে—
আয়িশা (রাঃ) বলেন:
“রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর যাদু করা হয়েছিল, ফলে তিনি মনে করতেন যে, তিনি কিছু কাজ করেছেন অথচ বাস্তবে তা করেননি।”
(সহিহ বুখারি: 5763, সহিহ মুসলিম: 2189)
👉 এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে যাদু বাস্তব এবং মানুষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আল্লাহর কৃপায় নবী ﷺ কে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
✨ হাদিস ২: যাদু করা বড় গুনাহ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেঁচে থাকো।” সাহাবারা বললেন: সেগুলো কী?
তিনি ﷺ বললেন: আল্লাহর সাথে শিরক করা, যাদু করা, নির্দোষ মানুষ হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের মাল খাওয়া, যুদ্ধ থেকে পালানো এবং সতী-সাধ্বী নারীর উপর অপবাদ দেওয়া।
(সহিহ বুখারি: 2766, সহিহ মুসলিম: 89)
👉 এই হাদিসে যাদু করার গুরুতর শাস্তি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
✨ হাদিস ৩: যাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় নিম্নলিখিত সূরা পাঠ করতেন—
সূরা আল-ফালাক (113)
সূরা আন-নাস (114)
সূরা আল-ইখলাস (112)
আয়িশা (রাঃ) বলেন:
“নবী ﷺ ঘুমাতে যাওয়ার সময় দুই হাত একত্র করে সূরা ফালাক, সূরা নাস ও সূরা ইখলাস পড়ে ফুঁ দিতেন, তারপর শরীরের উপর বুলিয়ে দিতেন।”
(সহিহ বুখারি: 5017)
👉 এ আমল কালো যাদু, নজর ও সব ধরনের অশুভ প্রভাব থেকে সুরক্ষার জন্য উত্তম।
🛡️ কালো যাদু থেকে মুক্তির ইসলামিক প্রতিকার
রুকইয়াহ শারইয়া (Ruqyah) – কুরআনের আয়াত ও দোয়া পড়ে চিকিৎসা করা।
আয়াতুল কুরসি প্রতিদিন পড়া।
সকালে-সন্ধ্যায় মুআউইযাত (সূরা ফালাক, নাস, ইখলাস) পড়া।
নিয়মিত যিকির ও দোয়া করা।
শিরক বা কুফরি ঝাড়ফুঁক এড়িয়ে চলা।
আরও বিস্তারিত ও প্রাসঙ্গিক তথ্যের জন্য লিঙ্কগুলো পড়ুন:
রুকইয়াহ সম্পর্কে প্রথমিক পরিচিতি
রুকইয়াহ সম্পর্কে মানুষের কিছু ভুল ধারনা ও শিরকি মতবাদ
প্রশ্ন: সুস্থ হওয়ার জন্য কত বার রুকইয়াহ করতে হয় বা কত সেশন লাগে?
যোগাযোগ করুন
ঠিকানা: মাতুয়াইল নিউ টাউন, সাইনবোর্ড – যাত্রাবাড়ী এরিয়া, ঢাকা
ফোন: 01770602542
WhatsApp: [01770602542
Map: Google Map
আজই যোগাযোগ করুন ও আপনার সমস্যা সমাধান করুন।
