তাবিজ পেলে কী করবেন? পূর্ণ ইসলামিক গাইডলাইন
তাবিজ পাওয়া মানেই জীবনে অশান্তি নেমে আসা বা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে, জাদু ও শিরক থেকে বাঁচতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। তাবিজ পেলে প্রথমেই মানুষ ভাবে – কে দিয়েছে? কেন দিয়েছে? কিন্তু ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো জানার প্রয়োজন নেই। মূল বিষয় হলো, কীভাবে তাবিজ নষ্ট করবেন এবং কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী মুক্ত থাকবেন। এই পূর্ণ গাইডলাইনে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করবো।
তাবিজ পেলে কেন ভয় পাওয়া উচিত নয়
তাবিজ পাওয়া মানেই সব শেষ নয়। বরং এটি একটি পরীক্ষা, আল্লাহর উপর ভরসার সুযোগ। অনেকেই তাবিজ পেলে আতঙ্কিত হয়ে যাদুকর বা কবিরাজের কাছে চলে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কবিরাজরা আসলে শয়তানের সাহায্য নেয়।
👉 যদি তাবিজে কুরআনের আয়াত না থেকে অজানা ভাষা, প্রতীক, সংখ্যা বা অদ্ভুত চিহ্ন থাকে – তবে সেটা কালো যাদুর তাবিজ। এগুলো আসলে জ্বিন ও শয়তানের সঙ্গে সম্পর্কিত।
⚠️ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: কে দিয়েছে, কেন দিয়েছে – এটা জানার চেষ্টা করা নিষিদ্ধ এবং এতে কোনো লাভ নেই। বরং আপনি চিকিৎসার দিকে মনোযোগ দিন।
যাদুকর চিনবেন কীভাবে?
অনেক মানুষ নিজের সমস্যার সমাধান জানতে গিয়ে প্রতারিত হয়। যাদুকররা কিছু নির্দিষ্ট কৌশলে মানুষকে ফাঁদে ফেলে। যেমন:
আপনার নাম ও বাবা-মায়ের নাম জিজ্ঞেস করবে
কোনো কিছু না বলেই আপনার ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলে দেবে
হাজিরা বা ইস্তিখারা নামক ভুয়া পদ্ধতির কথা বলবে
আসলে তারা জিন ও শয়তানের সাহায্যে এসব তথ্য সংগ্রহ করে। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে শিরক ও কুফরির কাজে জড়িয়ে ফেলে।
👉 এদের কাছে যাওয়া মানেই ঈমান নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি।
রাক্বী কিভাবে কাজ করে?
রাক্বী হলো ইসলামিক চিকিৎসক, যারা কেবল কুরআন ও হাদিসের আলোকে চিকিৎসা করেন।
তারা কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করেন
রুকইয়াহ শারইয়াহ দ্বারা সমস্যার ধরণ নির্ণয় করেন
চিকিৎসায় সময় লাগে সাধারণত এক ঘন্টা বা তারও বেশি
👉 সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো, রাক্বীরা তাবিজ দেখে কোনো ব্যাখ্যা দেন না। তাদের কাজ কেবল কুরআনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা।
তাবিজের ব্যাখ্যা কারা দিতে পারে?
শুধুমাত্র যাদুকর বা শয়তানের বন্ধু কবিরাজরা তাবিজের ব্যাখ্যা দিতে পারে। রাক্বীরা বা সাধারণ মানুষ এসব বুঝতে পারে না। যেমন কেউ গণিত জানে না, তাকে একটি অঙ্ক দিলে সে বুঝবে না। একইভাবে শয়তানী ভাষায় লেখা তাবিজ রাক্বীও বুঝবে না।
👉 তাই ব্যাখ্যা খোঁজা অর্থহীন।
তাবিজ নষ্ট করার সঠিক নিয়ম
ইসলামে তাবিজ পেলে সেটি ধ্বংস করে ফেলা জরুরি। এখানে ধাপে ধাপে তাবিজ নষ্ট করার নিয়ম দেওয়া হলো:
একটি পাত্রে পানি নিন।
পানিতে সুরা আ’রাফ 117-122, সুরা ইউনুস 81-82, সুরা ত্বাহা 69, সূরা ফালাক ৩ বার এবং সূরা নাস ৩ বার পড়ে ফুঁ দিন।
তাবিজ সেই পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। যদি কাগজ হয় তবে লেখাটি ঘষে মুছে ফেলুন এবং টুকরো টুকরো করে ফেলুন।
শুকিয়ে নিন এবং পরে আগুনে পুড়িয়ে ফেলুন। পুড়ানোর সময় ধোঁয়া শ্বাসে টানা থেকে বিরত থাকুন।
ধাতুর তাবিজ বা আংটি হলে লেখাটি ঘষে মুছে ফেলুন অথবা পুড়িয়ে দিন। যদি নিজে না পারেন তবে স্বর্ণকারের সাহায্য নিন।
তাবিজে গিট বা সুতা বাঁধা থাকলে প্রতিটি গিট খুলে ফেলুন।
সন্দেহজনক পুতুল, আংটি, পিন বা অন্য কিছু থাকলে সেগুলোও একইভাবে ধ্বংস করুন।
শেষে ব্যবহৃত পানি এমন জায়গায় ফেলুন যেখানে মানুষের যাতায়াত নেই।
👉 এভাবে করলে তাবিজ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে এবং এর প্রভাব শেষ হবে।
কে দিয়েছে বা কেন দিয়েছে – এটা জানার চেষ্টা কেন নয়?
তাবিজ পেলে অনেকেই ভাবে, “কে দিয়েছে? কেন দিয়েছে?” – এসব জানলে সমাধান হবে। কিন্তু বাস্তবে তাবিজে কখনও এসব লেখা থাকে না। কেবল আল্লাহই জানেন কে দিয়েছে।
✔️ এসব জানার চেষ্টা করলে মানুষ সময় নষ্ট করে এবং যাদুকরদের ধোঁকায় পড়ে।
❌ তাই মনোযোগ দিন চিকিৎসার দিকে, ব্যাখ্যার দিকে নয়।
তাবিজ পেলে কী করবেন – সংক্ষিপ্ত সমাধান
ভয় পাবেন না
কবিরাজ বা যাদুকরের কাছে যাবেন না
কুরআনের আয়াত পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে তাবিজ ধ্বংস করুন
অভিজ্ঞ রাক্বীর সহায়তা নিন
কে দিয়েছে বা কেন দিয়েছে – এসব নিয়ে সময় নষ্ট করবেন না
তাবিজ ও যাদু থেকে মুক্ত থাকার উপায়
ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ুন
ঘরে কুরআন তেলাওয়াত করুন
যাদুকর, জ্যোতিষী ও কবিরাজদের থেকে দূরে থাকুন
আল্লাহর উপর ভরসা করুন এবং সর্বদা তাওবা ক্রুন।
আরও বিস্তারিত ও প্রাসঙ্গিক তথ্যের জন্য লিঙ্কগুলো পড়ুন:
রুকইয়াহ সম্পর্কে প্রথমিক পরিচিতি
রুকইয়াহ সম্পর্কে মানুষের কিছু ভুল ধারনা ও শিরকি মতবাদ
প্রশ্ন: সুস্থ হওয়ার জন্য কত বার রুকইয়াহ করতে হয় বা কত সেশন লাগে?
যোগাযোগ করুন
ঠিকানা: মাতুয়াইল নিউ টাউন, সাইনবোর্ড – যাত্রাবাড়ী এরিয়া, ঢাকা
ফোন: 01770602542
WhatsApp: [01770602542
Map: Google Map
আজই যোগাযোগ করুন ও আপনার সমস্যা সমাধান করুন।